(মার্চ ২৪, ২০২০ এ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তে প্রকাশিত মাইকেল গ্রেস্কো'র নিবন্ধ অবলম্বনে)
সম্প্রতি সনাক্তকৃত করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯, যা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে, এর সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত অনেক কিছুই জানেনা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর উপর জোর গবেষণা চলছে এবং গবেষণার ফলাফল এতো দ্রুত গতিতে এবং এতো বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে যে সাধারণ মানুষের জন্য তার খেই হারিয়ে ফেলাটা খুবই সঙ্গত। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেনা বাড়িতে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের কীভাবে সাহায্য করবে। এখনো পর্যন্ত এর সার্বজনীন কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত না হওয়ায় চিকিৎসকরাও অনেক ক্ষেত্রে অসহায় বোধ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার শীর্ষস্থানীয় কিছু চিকিৎসক এবং গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে এখানে কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হলে করণীয় কিছু পরামর্শ তুলে ধরছি।
কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ গুলি কি? ভাইরাস এর সংস্পর্শে আসার পর লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রোগীভেদে উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে তবে যেসব উপসর্গ কমবেশি সকল রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে জ্বর, কাশি এবং স্বাসকষ্ট। রোগীর শারীরিক সুস্থতা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ভেদে লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিভাবে বাড়িতে সেবা দিবেন? প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিড -১৯ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি হালকা থেকে মাঝারি রকমের তীব্র হয়। এরকম অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে বাড়িতেই সেবা প্রদান করা যেতে পারে। রোগীকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের থেকে আলাদা রাখুন, প্রচুর পানি এবং তরল খাবারের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থসম্মত খাবার খেতে দিন এবং প্রচলিত উপায়ে তাঁর উপসর্গ গুলি প্রশমনের চেষ্টা করুন। জ্বর নিরাময়ে এসিটামিনোফেন - যা ফার্মেসিতে প্যারাসিটামল হিসাবে পাওয়া যায় - দিতে পারেন। প্যারাসিটামল কার্যকর না হলে রোগীকে আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ দিতে পারেন। তবে প্রথমেই আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ দেয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধগুলি থেকে কিডনির ক্ষতি, পেটের আলসার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরনের মত কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলেও পার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যদি কারো লিভারে সমস্যা থাকে অথবা প্যারাসিটামলে অ্যালার্জি থাকে। কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দৈনিক তিন হাজার মিলিগ্রামের বেশি পরিমানে এই ঔষধগুলি খাওয়া উচিত নয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। প্যারাসিটামল খেলে রোগীকে অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে, তা নাহলে রোগীর লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ক্লোরোকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন খাওয়া কি ঠিক হবে? অ্যাজিথ্রোমাইসিন একধরণের অ্যান্টিবায়োটিকএবং ক্লোরোকুইন একটি অ্যান্টিম্যালারিয়াল ড্রাগ। চিকিৎসকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুটি ঔষধকে সমর্থন করেছেন। তবে এই ঔষধগুলির এখনো ট্রায়াল পর্ব চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো কার্যকর হয়েছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো ক্ষতির কারণও হয়েছে। কাজেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এইসব ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।
[এই লেখাটি প্রকাশের তিন দিন পর মার্চ ৩০, ২০২০ এ সিএনএন টুইটার থেকে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনুমতি দিয়েছে কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করার। তবে রোগীভেদে এর পরিমান এবং মাত্রা কেবল চিকিৎসকরাই সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে এই ঔষধগুলি খাওয়া উচিত নয়।]
রক্তচাপের রোগী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি রক্তচাপের ঔষধ চালিয়ে যাবেন? এ বিষয়ে বিশষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবনে পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নাই।
এই প্রশ্নটি কেন এখানে আলোচনা করা হয়েছে তা বোঝার জন্য কিছু তথ্য এখানে উল্লেখ করছি। গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাস দেহকোষে প্রবেশ করে angiotensin-converting enzyme 2 (ACE2) বা এসিই - ২ নামক একটি প্রোটিনের সাহায্যে। এই প্রোটিনটি মানুষের হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের উপরিভাগে প্রচুর পরিমানে থাকে। যার কারণে করোনা ভাইরাস এর আক্রমণটাও এখানথেকেই শুরু হয়। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের চিকিৎসায় যে ঔষধ দেয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে এসিই ইনহিবিটরস থাকে। মুশকিল হচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসিই ইনহিবিটরস মানুষের দেহে এসিই - ২ প্রোটিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। কাজেই কিছু গবেষক দাবি করছেন যে উচ্চ রক্তচাপের এই ঔষধগুলো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর জন্য আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এখনো পর্যন্ত এর কোনো প্রত্যক্ষ প্রমান পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত রোগীকে কখন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন? আক্রান্ত রোগীর স্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ভাইরাস এ আক্রান্ত রোগীদের রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এই অবস্থা খুব তীব্র হলে রোগীকে কৃত্তিম উপায়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এরকম অবস্থায় রোগীকে বাড়িতে না রেখে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অবস্যই প্রয়োজন। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর না থাকলে হয়তো চিকিৎসকরা বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হবে। এক্ষেত্রে রোগীকে কোন হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভেন্টিলেটরের সুবিধা পাওয়া যাবে তা আগে থেকে জেনে রাখতে পারেন। ছবি: সংগৃহিত
Yorumlar